মুসলিম জাতির হায়াত কি সত্যিই ৪৯ বছর বাকী রয়েছে?
♥ আসসালামু আলাইকুম ♥
আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন।
বুঝতেই পারছেন, আজকের আলোচনা কি নিয়ে।
জানি এই আলোচনায় মতবিরোধ আছে,,,,
আমি আজ এটা বলবো না যে, আমি যা বলবো তাই সঠিক। আমি শুধু প্রমান করবো,,, শুধু যে মুসলিম উম্মতের হায়াত ৪৯ বছর ই আছে, এটাই একমাত্র হিসাব আর কোনো হিসাব নেই,,,, তা নয়,৷ বরং,,, ইমাম মাহদী কবে আসবেন, দাজ্জাল -ইছা (আঃ) কবে আসবেন, তা নিয়ে যেমন মত বিরোধ আছে, ঠিক তেমনি মুসলিম উম্মতের হায়াত নিয়েও অনেক মতামত আছে।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
বর্তমানে যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বর্নিত আখেরি জমানার হাদিস গুলো নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের কেউ কেউ দুয়েকটি হাদিসের ব্যাখ্যা করে বলছেন মুসলমানদের হায়াত আর ৪৯ বছর বাকী রয়েছে বলে প্রচার করছেন।
এমনকি তারা এই ৪৯ বছরের উপর নির্ভর করেই বলছেন, ইমাম মাহদী ২০১৯/২০ সালেই আত্নপ্রকাশ করবেন। বিশেষ করে, শাইখ মুফতি কাজি ইব্রাহিম সাহেব যখন এটা প্রচার করলেন, তখন বিষয়টি আরও ব্যাপক আকারে প্রচার হতে লাগল। যদিও আমি নিজেই মুফতি কাজি ইব্রাহিম সাহেবকে অনেক পছন্দ করি, কিন্তু তার সব ব্যাখ্যার সাথে আমি একমত নই।
কিন্তু আসলেই কি মুসলমানদের হায়াত আর ৪৯ বছর বাকী আছে?
হিসাব করা যাক।
————————————————————–
((বিঃ দ্রঃ উম্মতের হায়াত ৪৯ বছর থাকার কথাটি ২ বছর আগের।
১৪৩৯ হিজরি তে বলা হয়েছে আর ৪৯ বছর আছে। আর এখন ১৪৪১ হিজরি সন।৷
তবে যেহেতু, সবার মুখে মুখে ৪৯ বছরের কথাটাই বেশি, তাই হিসাবটাও ১৪৩৯ থেকেই করা হলো। তাহলে বুঝতে সবারই সুবিধা হবে।))
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
কেন তারা বলেন, আর ৪৯ বছর বাকী রয়েছে? চলুন জেনে নেই,
♥ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দুনিয়ার বয়স ৭ দিন, আর ১ দিন হচ্ছে, ১০০০ বছর। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শেষ দিনে পৃথিবীতে আগমন করেছেন। অর্থাৎ ১০০০ বছর পূর্বে।
অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মত অর্ধ দিবস হায়াত বেশি পাবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করল, অর্ধ দিবস সমান কত দিন? তিনি বললেন, অর্ধ দিবস হল, ৫০০ শত বছর।
(আবু দাউদঃ হাদিস নং – ৪৩৫০)
উপরের দুটি হাদিসে(১০০০ +৫০০=১৫০০ বছর) হয়।
♥ ইবনে জায়েদ আল জুহায়নী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল, আমি স্বপ্নে দেখলাম সাতটি সিড়ি রয়েছে, আর আপনি সপ্তম সিঁড়িতে দাড়িয়ে আছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, দুনিয়া ৭০০০ বছর। আর আমি শেষ সময়ে অবতীর্ণ হয়েছি।
(আল মুত্তাকী আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান। পৃষ্ঠা নং – ৮৯)
“আমার উম্মতের হায়াত হল, ১০০০ বছর। কিন্তু তারা ১৫০০ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হবে না”।
(লেখকঃ আল বারজানীঃ আস সায়াহ লিল আশরাত আস সায়াহ। পৃষ্ঠা নং – ২৯৯)
(লেখকঃ আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতীঃ আল কাশফুল মুজাওয়ামাত উম্মাহ আল আলফ)
তারা বলে, যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মুসলিম জাতির হায়াত ১৫০০ বছর, আর বর্তমানে ১৪৩৯ হিজরী চলছে, তাই (১৫০০-১৪৩৯=৫১) বছর বাকী রয়েছে। তারা আরও বলে, যেহেতু হিজরী সাল সৌর বছরের চেয়ে তুলনায় ১১ দিন ছোট হয়, তাই আরো ২ বছর কমবে। তাই মুসলিম জাতির হায়াত আর ৪৯ বছর বাকী রয়েছে। আর যেহেতু ইমাম মাহদী ৭ বছর ও হযরত ঈসা (আঃ) ৪০ বছর খিলাফতের দ্বায়িত্বে থাকবেন, তাই ইমাম মাহদী আর দুই বছরের (অর্থাৎ ২০১৯ থেকে ২০২৩ এর) মধ্যে আত্নপ্রকাশ করবেন।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
সত্যিই কি মুসলিমদের হায়াত আর ৪৯ বছর বাকী?
————————————————————
♦উপরের হাদিস গুলোর সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। দ্বিমত হল, তাদের হিসাবের সাথে কিছু হাদীসের মিল নেই, তাই আমি মনে করছি, এবিষয়ে সবাই কে জানানো উচিৎ ।
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
♦১))হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পরকালের তুলনায় দুনিয়ার হায়াত মাত্র ৭ দিন। আর পরকালের ১ দিন হল দুনিয়ার ১০০০ বছরের সমান। আর আল্লাহর ১ দিন, আমাদের গণনায় ১০০০ বছর। (সূরা হাজ্জ্বঃ আয়াত নং ৪৭)
(লেখকঃ আল মুত্তাকি আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান। পৃষ্ঠা নং-৮৮)
সুতরাং ৭ দিন (৭×১০০০=৭০০০ বছর) অর্থাৎ দুনিয়ার বয়স ৭০০০ বছর।
২)) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তার “ইলাল” নামক গ্রন্থে লিখেছেন, “পৃথিবী তার ৫৬০০ বছর অতিবাহিত করেছে”। (অর্থাৎ পৃথিবীর হায়াত ৭০০০ বছর থেকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মের পূর্বে ৫৬০০ বছর অতিবাহিত করেছে)
(লেখকঃ আল মুত্তাকী আল হিন্দিঃ আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদী ফি আখিরুজ্জামান। পৃষ্ঠা নং – ৮৯)
সুতরাং এর অর্থ এমন যে, মুসলিম জাতি ৭০০০ বছর পূর্ন করার পর আরো ৫০০ বছর অতিরিক্ত বেশি পাবে। তাই উম্মতের বয়স হবে,৭৫০০ বছর,,
আর রছুল (ছাঃ)- ৫৬০০ বছরের মাথায় এসেছেন, তাহলে,
,(৭০০০-৫৬০০) ১৪০০ বছর। তারপর আল্লাহ আমাদের অতিরিক্ত আরো ৫০০ বছর দিয়েছেন। তাহলে (১৪০০+৫০০) =১৯০০ ব
ছর। অর্থাৎ পৃথিবী ধ্বংস হতে এখনও বাকি আছে, (১৯০০-১৪৩৯) = ৪৬১ বছর।
(এগুলো শুধু মাত্র বোঝানো হচ্ছে যে, শুধু ৪৯ বছরের হিসাবই নয়, আরও হিসাব আছে)
___________________________________________
৩)) ** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্নিত যে, হযরত আদম (আঃ) থেকে হযরত নুহ (আঃ) পর্যন্ত সময় ছিল ২২৫৬ বছর, হযরত নুহ (আঃ) থেকে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পর্যন্ত সময় ছিল ১০৭৯ বছর, হযরত মুসা (আঃ) থেকে হযরত সুলাইমান (আঃ) এর জেরুজালেমের বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ নির্মাণের সময় ছিল ৫০৬ বছর, হযরত সুলাইমান (আঃ) থেকে হযরত জুলকারনাইন (আঃ) এর মধ্যে সময় ছিল ২২০ বছর, হযরত জুলকারনাইন (আঃ) থেকে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সময় ছিল ৩৬৯ বছর, হযরত ঈসা (আঃ) থেকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সময় ছিল ৫৫১ বছর। আর মধ্যবর্তী ৪৩৪ বছর ছিল বিরামকালীন সময়। এই হল পৃথিবীর ৭০০০ বছর। (অর্থাৎ মুসলিম জাতির জন্য অবশিষ্ট রয়েছে ১৫৮৫ বছর)
(তাবারী অনুবাদকৃতঃ পৃষ্ঠা নং – ২৮৯-২৯০)
♦এই হাদিসে যেহেতু ১৫৮৫ বছর অবশিষ্ট থাকে। তাই হতে পারে, এই সময়টুকুই হল মুসলিম জাতির হায়াত। তাই মুসলিম জাতির হায়াত বাকি আছে, (১৫৮৫ – ১৪৩৯) =১৪৬ বছর।
((এই হাদিস টির হিসাবে আসে, ১৪৬ বছর এখনো আছে))।
♦৪))যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ১১ হিজরীতে মৃত্যু করেছেন, তাই মুসলিম জাতির হায়াত বলতে, ১৫১১ হিজরী পর্যন্ত কেই বুঝানো হয়েছে। তারপর এই সময়ে যারা জন্মগ্রহণ করবে, তাদের সহ আরো ১০০ বছর যুক্ত হবে। অর্থাৎ ১৬১১ হিজরী (২১৮৪ সাল) পর্যন্ত। কারন,
♥ হযরত উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মুমিন বান্দা যখন ৪০ বছর বয়সে পৌছে, তখন আল্লাহ তার হিসাব সহজ করে
দেন,যখন ৬০ বছর বয়সে পৌছে, তখন সে আল্লার দিকে রুজু হওয়ার তওফীক পায়,যখন সে ৭০ বছর বয়সে পৌছে আকাশের অধিবাসীরা তাকে ভালোবাসতে শুরু করে, যখন ৮০ বছর বয়সে পৌছে তখন আল্লাহ তার সৎকর্মসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত করেন ও অসৎ কর্ম মিটিয়ে দেন, যখন ৯০ বছর
বয়সে পৌছে তখন আল্লাহ তার সমস্ত অতীত গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তাকে তার পরিবার পরিজনের জন্য সুপারিশ করার অধিকার দেন এবং আকাশে তার নামের সাথে ‘সে পৃথিবতে আল্লাহর কয়েদী।’ এ কথাটি লিখে দেন।
(ইবনে কাসীর)
♦এই হাদিস অনুযায়ী ঐই সময়ের উম্মতের লোকদের সর্বোচ্চ বয়স ১০০ বছর ধরা যাবে। তাই এই হিসাব অনুযায়ী উম্মতের হায়াত এখনও ১৬৬ বছর বাকী রয়েছে।
♥তবে, উক্ত লেখকের বিশ্লেষন অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে কিয়ামতের বড় আলামত গুলো প্রকাশ পাবে।
(সংগ্রহঃ মাসিক মদিনা ২০১৫, ইমাম মাহদী ও দাজ্জালের সম্ভাব্য আগমন কাল)।
♦৫)) “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মতের একদল লোক কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের উপর অটল থাকবে”।এর ব্যাখ্যায় তুরস্কের ১৩০০ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ বদিউজ্জামান সাইদ নুসরী (রহঃ) বলেন, ১৫৪২ হিজরী (২১১৭ সাল) পর্যন্ত মুসলিমরা বিজয়ী থাকবে।তার পর ১৫৪৫ হিজরীতে সবাই মৃত্যু বরণ করবে( অর্থাৎ কিয়ামত সংগঠিত হবে) । তিনি মূলত আবজাদ সংখ্যাতত্ব হিসাব অনুযায়ী এই ব্যাখ্যা করেছেন।
(লেখকঃ বদিউজ্জামান সাইদ নুসরীঃ কাস্তামানু আদ দিন দুউম। পৃষ্ঠা নং – ৩৩)
তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী যেহেতু মুসলিম জাতির চুড়ান্ত ধ্বংস হবে ১৫৪৫ হিজরী (২১২০সাল) তাই এখনও মুসলিম জাতির হায়াত বাকি রয়েছে (১৫৪৫ – ১৪৩৯)= ১০৬ বছর।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
♥মুসলিম জাতির হায়াত ১৫০০ বছর এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের বক্তব্যঃ
————————————————————————
বক্তব্য ১,♥ আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (রহঃ) এর মতে, ১৫০৬ হিজরী পর্যন্ত মুসলিমদের স্থায়ীত্ব থাকবে। এর মূলতঃ তিনটি অর্থ হতে পারে। যেমনঃ
ক) ১৫০৬ হিজরী সালের মধ্যে মুসলমানদের একটা বিরাট অংশ যুদ্ধ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, ও অন্যান্য কারণে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাবে। অর্থাৎ বর্তমানে পৃথিবীতে ১৮০ কোটি মুসলিম আছে, কিন্তু ১৫০৬ হিজরীতে সেটা মাত্র কয়েক লাখে অবশিষ্ট থাকতে পারে।
খ) ১৫০৬ হিজরী পর্যন্ত মুসলিমরা শান্তি শৃঙ্খলার সাথে বসবাস করবে। তারপর হাদিসে বর্ণিত ইমাম মাহদী, ভয়ংকর মহাযুদ্ধ, দাজ্জালের আবির্ভাব, ইহুদীদের সমূলে ধ্বংস হওয়া, হযরত ঈসা আঃ আকাশ থেকে অবতরণ, দাব্বাতুল আরদের আত্নপ্রকাশ, ইয়াজুজ মাজুজের বের হওয়া ঘটতে পারে।
গ) এই ১৫০৬ হিজরী পর্যন্ত যারা মুসলিম হিসাবে জন্মগ্রহণ করবে, তারা মুসলিম জাতির অন্তর্ভুক্ত হবে। তার পর আর কেউ হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উম্মত হবে না।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
বক্তব্য ২,))♦ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এর মতে, ১৫০০ বছরের মুসলিমদের হায়াত দ্বারা মূলত ইহুদীদের সাথে আমলের একটা তুলনা করা হয়েছে। তাদের থেকে আমরা কম সময় আমল করেও বেশি সাওয়াব পাব। মূলত ইহুদীরা ২১০০ বছর সময় পেয়েছিল।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
♥মুসলিম জাতির হায়াত ৪৯ বছর বাকী আছে, এই ব্যাখ্যা কেন যুক্তিসংগত নয়?
——————————————————————————
১,)) এখনো ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় ভেসে ওঠে নি। (ইনশাল্লাহ ২০২৩ সালে প্রকাশিত হবে)
(কিতাবুল ফিতানঃ হাদিস নং – ৬৭৬)
২,)) এখনো ইমাম মাহমুদ হাবিবুল্লাহ ও সাহেবে কিরান এর আগমন ও প্রকাশ ঘটেনি। এবং তাদের নেতৃত্বে হিন্দুস্থান বিজয় হয়নি।
৩))বিশ্বযুদ্ধের কারনে ২ তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায় নি।
৪))ইমাম মাহদীর শত্রু সুফিয়ানীর উত্থান এখনো হয়নি।
সুফিয়ানী মাহদীর ২ বছর আগেই সিরিয়াতে আত্নপ্রকাশ করবে। এবং সে ইমাম মাহদীকে হত্যা করতে সৈন্য বাহিনী পাঠাবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার বাহিনীকে মাটির নিচে ধ্বংস করে দিবেন।
“বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী শাসক সিরিয়াতে আত্মপ্রকাশ করবে। তার পর সে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা করবে। সে সময় মদিনা আক্রমণের জন্য সে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে। তারা আল্লাহপাকের ইচ্ছানুপাতে যুদ্ধ করবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানটিকে পর্যন্ত সে হত্যা করবে। এই গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফাতেমার কিংবা বলেছেন আলীর বংশের এক আশ্রয় গ্রহণকারী হারামে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন তাকে ধরার জন্য উক্ত বাহিনী তার কাছে ছুটে যাবে। বাহিনীটি বায়দা নামক স্থানে উপনীত হওয়ার পর তাদের ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। শুধু সেই লোকটি রক্ষা পাবে, যে মানুষকে সতর্ক করে বেড়াবে”। (ইলাল, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪২৫)
৫)) সাহেবে কিরান এর নেতৃত্বে জেরুজালেম বিজয় হয়নি। আর তারপর মাহদী প্রকাশ ঘটবে। আর তিনি জেরুজালেমে নিরাপদে ভ্রমণ করবেন।
৬)) খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী ইমাম মাহদীর সাহায্যকারী কারি বাহিনীর উত্থান এখনো হয়নি। যাদের নেতৃত্ব দিবেন, ইমাম মাহমুদ হাবিবুল্লাহ, সাহেবে কিরান, মানসুর, শুয়াইব ইবনে ছালেহ। আর তাদের উত্থানের ৬ বছরের মধ্যেই ইমাম মাহদী আত্নপ্রকাশ করবেন। (কিতাবুল ফিতানঃ হাদিস নং – ৮০৪)
৭))হলুদ পতাকাবাহী বর্বর আবকা জাতির উত্থান হয়নি। তাদের উত্থান হবে মিশর থেকে।
৮))আরব উপদ্বীপে এখনো ক্ষমতা দখলের র জন্য এখনও যুদ্ধ হয়নি।
“মিশর ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব (বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন) নিরাপদ থাকবে। কুফা (বর্তমান ইরাকে) ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবে না। মহাযুদ্ধ সংগঠিত হয়ে গেলে বনু হাশিমের এক ব্যক্তির হাতে কুস্তুন্তুনিয়া (বর্তমান ইস্তাম্বুল) জয় হবে”। (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৮৫)
৯))ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর মাহমুদ নামের খলীফা ২ বছর ও মনসুর নামে একজন খলিফা ২০ বছর রাজত্ব করবে। তার দুই কানে ছিদ্র থাকবে।
♥হযরত আরতাত রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
ইমাম মাহদীর শাষণ আমলের পর,দুই বছর ইমাম মাহমুদ বিশ্ব শাষণ করবে।যে হবে খুব কঠর,(শত্রুদের জন্য)
আর দূর্বলদের জন্য কমল অন্তরের।
(কিতাবুল ফিরদাউস,
অধ্যাঃ যুদ্ধ বিগ্রহ,
হাদিছ নংঃ৭৭১)
এবং
♥ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,
রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
আমার যামানায় আমি মুনাফিকদের ঘৃণা করি কিন্তু হত্যা করি না।আর আমার যামানার শেষের দিকে আমার বংশের ইমাম মাহদীর পর,একজন ইমাম দু বছরের খেলাফত পাবে,,তার খেলাফতের সময় মুনাফিকদের প্রকাশ্য হত্যা করা হবে।
(কিতাবুল ফিরদাউস,
অধ্যায়ঃ মুনাফিকের শাস্তির বর্ণনা,
হাদিছ নংঃ ১২১০)
________________________________________
আর এরপর মানসুর ২০ বছর বিশ্ব শাসন করবেন।
♥হযরত আরতাত(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদীর মৃত্যু বরণ করার পর কাহতান গোত্রের উভয় কান ছিদ্র বিশিষ্ট একজন লোক শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবে । তার চরিত্র হবে হুবহু মাহদির মত। তিনি দীর্ঘ বিশ বৎসর পর্যন্ত শাসক হিসেবে থাকার পর, তাকে অস্ত্রের মুখে হত্যা করা হবে । এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর বংশধর থেকে জনৈক লোকের আত্নপ্রকাশ হবে। যিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবেন। তার হাতে কায়সার সম্রাটের শহর বিজয় হবে। তিনিই হবেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মতের মধ্যে সর্ব শেষ খলীফা বা বাদশাহ। তার যুগেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং হযরত সাইয়িদুনা ঈসা (আঃ) আসমান থেকে অবতরণ করবেন।
(কিতাবুল ফিতানঃ হাদিস নং – ১২৩৪)
১০))খ্রিস্টানদের সাথে মুসলিমদের ১০ বছরের একটি শান্তি চুক্তি হবে।
তোমরা সাত বছরের জন্য (কোনও বর্ণনায় এসেছে দশ বছর) খ্রিস্টানদের সাথে চুক্তি করবে”। (আসসুনানুল ওয়ারিদাতুল ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১০)।
১১)মুসলমান ও খ্রিস্টানরা উভয়ে মিলে পিছনের দিকের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
হযরত কা’ব (রাঃ) বলেছেন, “তোমরা দশ বছরের জন্য (কোনও বর্ণনায় এসেছে সাত বছর) রোমানদের সাথে সন্ধি চুক্তি করবে। তোমরা এবং রোমানরা মিলে কুস্তুন্তুনিয়ার (বর্তমান তুরস্কের ইস্তাম্বুলের) পেছনের দিককার শত্রুর (মানচিত্র অনুযায়ী বর্তমান রাশিয়ার) সাথে যুদ্ধ করবে। যুদ্ধ শেষে ফেরার সময় তোমরা কুস্তুন্তুনিয়া দেখতে পাবে। এবার তোমরা এবং রোমানরা মিলে কুফা নগরী আক্রমণ করবে এবং একে ধ্বংস করে ফেলবে। এরপরে তোমরা এবং রোমানরা মিলে পূর্বের কিছু এলাকা কারমান প্রদেশ (বর্তমান ইরান) আক্রমণ করবে”। (কিতাবুল ফিতান)
১২))কাহতানী গোত্রের একজন সৎ লোক শেষ যুগে খলিফা হবেন। সে সমস্ত মুসলিমদের লাঠির মাধ্যমে (কঠোর শাসনের মাধ্যমে) একত্রিত করবেন। সে মায়ের বংশের দিক থেকে কুরাইশ বংশের হবেন। তার কপাল একটু বাঁকা প্রকৃতির হবে। সে ইয়েমেনের সানা শহরের নিকটবর্তী গ্রামে জন্মগ্রহণ
করবেন।(মানসুর) ( সহিহ বুখারীঃ হাদিস নং – ৬৬৩২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনী)
এখানে রাজত্ব কাল নয়, মানসুরের প্রকাশের কথা বলা হয়েছে।
১৩))জাহজাহ নামক এক ব্যক্তি রাজত্বের মালিক হবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দিন-রাত্রি ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না, যতক্ষণ না জাহজাহ নামক একজন কৃতদাস রাজত্বের মালিক না হয়। ( বোখারী, হাদি সহিহঃ মহা প্রলয়ঃ ড. আরেফী)
১৪))ইমাম জাহজাহ এর সময় হিন্দুস্তানের ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে মুমিনরা এবং এই যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয়ে হিন্দুস্তানের রাজাদের শিকল দিয়ে বেধে সিরিয়াতে নিয়ে যাবে। যা ইমাম জাহজাহ এর শাসনামলে, ইমাম মাহমুদ এর একজন সাধারন প্রতিনিধির সাথে ইহুদী রা শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করে ভারত দখল করবে। ও জাহজাহ জেরুজালেম থেকে ভারতে সৈন্য প্রেরন করবেন। তারা এসে আবারো হিন্দুস্থান দখল করবে বা গাজোয়ায়ে হিন্দ করবে। এরপরই দাজ্জাল বের হবে।
হযরত কা’ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, বায়তুল মোকাদ্দাসের একজন বাদশাহ ভারতের দিকে সৈন্য প্রেরণ করবে এবং সেখানের যাবতীয় সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। ঐ সময় ভারত বায়তুল মোকাদ্দাসের একটি অংশ হয়ে যাবে। তখন তার সামনে ভারতের সৈন্য বাহিনী গ্রেফতার অবস্থায় পেশ করা হবে। প্রায় গোটা পৃথিবী তার শাসনের অধীনে থাকবে। ভারতে তাদের অবস্থান দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত থাকবে। [ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২৩৫ ]
১৫)) ইছা আঃ এর মৃত্যুর পর হাবশী রাজা কাবাঘড় ভেঙে ফেলবে এবং এর ১০ বছর পর শিতল হাওয়া এসে মুমিনদের মৃত্যু ঘটাবেন আল্লাহ।
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
উপরের সবগুলো ঘটনা ঘটবে, হাদিস বলে।কিন্তু এতো অল্প সময়ে তা সম্ভব নয়। তাই কোন ভাবেই প্রমাণিত হয়না, যে মুসলিম জাতির হায়াত আর মাত্র ৪৯ বছর বাকী রয়েছে।
এছাড়াও আরো অনেক ভাবেই বোঝা যায়, ৪৯ বছর নয়, বরং, আরো বেশি সময় হায়াত আছে। তার মধ্যে
এটাই যুক্তি সংগত ও সঠিক হবার আশংকা অধিক,
♥“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মতের একদল লোক কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের উপর অটল থাকবে”।এর ব্যাখ্যায় তুরস্কের ১৩০০ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ বদিউজ্জামান সাইদ নুসরী (রহঃ) বলেন, ১৫৪২ হিজরী (২১১৭ সাল) পর্যন্ত মুসলিমরা বিজয়ী থাকবে। ১৫০৬ হিজরী (২০৮২ সাল) হাদিসে বর্ণিত খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে বিজয়ী হবে।তার পর ১৫৪৫ হিজরীতে সবাই মৃত্যু বরণ করবে( অর্থাৎ কিয়ামত সংগঠিত হবে) । তিনি মূলত আবজাদ সংখ্যাতত্ব হিসাব অনুযায়ী এই ব্যাখ্যা করেছেন।
(লেখকঃ বদিউজ্জামান সাইদ নুসরীঃ কাস্তামানু আদ দিন দুউম। পৃষ্ঠা নং – ৩৩)
তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী যেহেতু মুসলিম জাতির চুড়ান্ত ধ্বংস হবে ১৫৪৫ হিজরী (২১২০সাল) তাই এখনও মুসলিম জাতির হায়াত বাকি রয়েছে (১৫৪৫ – ১৪৩৯)= ১০৬ বছর।
অর্থাৎ,, ২১২০ সালে উম্মতের হায়াত শেষ হবে।
আর আগামী কথন কবিতায়ও বলা আছে, ২১১০ সালে কাবাঘর ভাঙ্গবে ও তার দশ বছর পর,অর্থাৎ ২১২০ সালে শিতল হাওয়া এসে মুমিনদের মৃত্যু ঘটানোর মাধ্যমে উম্মতের হায়াত শেষ হবে।!!
(বন্ধুরা এসবই মত বিনিময়, চুড়ান্ত হিসাব আল্লাহর কাছে)
ধন্যবাদ সবাই কে।
♥আসসালামু আলাইকুম'♥
No comments:
Post a Comment